‘বাংলায় বিজেপি এলে NRC করে গলা ধাক্কা দিয়ে বাংলাদেশে পাঠানো হবে অনুপ্রবেশকারীদের।’

সারা দেশের জাতীয় রাজনীতি এখন একটা বিষয় নিয়েই তোলপাড় সেটা হল জাতীয় নাগরিক পঞ্জি ইস্যু। পিছিয়ে নেই বাংলাও। আমাদের রাজ্য রাজনীতি এই বিষয় নিয়ে সরব হতে বেশি সময় নেই নি। তৃণমূল থেকে বামপন্থী সকলেই বিরোধতা করছে এই পদক্ষেপের। ঠিক তখনই সেই বিষয় নিয়ে রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ পাল্টা সুর চড়ালেন। সোমবার বিধানসভা শেষ হবার পরে দিলীপ ঘোষ একটি সাংবাদিক সম্মেলন করেন সেখানে তিনি মন্তব্য করেন যে, ” পশ্চিমবঙ্গে বিজেপি ক্ষমতায় আসার পর এই রাজ্যেও করানো হবে এনআরসি”। তারপর অনুপ্রবেশকারী হিসাবে যাদের নাম উঠে আসবে তাদের কে গলা ধাক্কা দিয়ে বাংলাদেশ পাঠানো হবে। এবং তিনি এটাও বলেন যে যারা তাদেরকে সাপোর্ট করবে তাদেরকেও ছেড়ে কথা বলব না।

তাঁর কথায়, ভোটের লোভে সেই বাম আমল থেকে ভারতবর্ষতে অনুপ্রবেশ শুরু হয়েছে। শুধুমাত্র নিজেদের গদির লোভে সেই সময় কোনো প্রতিবাদ করেন নি বামফ্রন্ট সরকার। ঠিক সেই একই কারনে বর্তমান শাসক দল তৃনমূল সরকার এখন কোনো প্রতিবাদ করছে না। সোমবার আসমে চুড়ান্ত নাগরিকপঞ্জি প্রকাশ করা হয়েছে। সেখান দেখা গেছে অসংখ্য বাঙালি সহ ৪০ লক্ষ মানুষের নাম নেই সেই নাগরিকপঞ্জিতে। এর পরেই রাজনৈতিক মহল তোলপাড় হয়ে উঠেছে সেই বিষয় কে কেন্দ্র করে। সংসদে এই বিষয় নিয়ে বিজেপিকে আক্রমণ করেন কংগ্রেস, তৃণমূল, সিপিএম সহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল।

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এটা নিয়ে বিজেপির উপর তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেন। কিন্তু বিজেপি কোনো সমালোচনা তে কান দিতে রাজি নয়। উলটে এই দিন দিলীপ বাবু অভিযোগ করেন কংগ্রেসের বিরুদ্ধে। এবং এই বিষয় নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের ঘাড়ে দায় চাপান তিনি। তিনি তার বক্তব্যে পরিষ্কার ভাবে বলে দেন যে কংগ্রেস এটা চালু করে আমাদের ক্ষমতায় আসার আগে। এবং তিনি আরও বলেন যে সুপ্রিমকোর্টের নির্দেশ মেনেই এই কাজ করা হয়েছে।

এই দিন বিজেপিকে তোপ ডেকে সিপিএম ও কংগ্রেস দলের নেতারা বলেন যে বিজেপি পার্টি হল একটা বাংলা বিরোধী দল। কিন্তু তাদের কথায় কোনো গুরুত্ব না দিয়ে দিলীপ ঘোষ বলেন যে কংগ্রেস ও সিপিএম এর অভিযোগের কোনো মূল্য নেই। তিনি আরও বলেন যে কংগ্রেসের আমলে যখন লক্ষ্য লক্ষ্য হিন্দুকে কাশ্মীর থেকে অত্যাচার করে তাড়ানো হয়েছিল তখন এই কংগ্রেস- সিপিএম কোথায় ছিল? সেই সময় তো তাদের কোনো প্রতিবাদ করতে দেখা যায় নি।

সেই সাথে তিনি হুঙ্কার দিয়ে বলেন যে ১ কোটির বেশি অবৈধ নাগরিক বাংলাতে প্রবেশ করেছে তাদের সবাইকে বাংলাদেশে পাঠানো হবে। অনেকের মতে বিজেপিকে বাংলা বিরোধী বলার কারন হল বিজেপি যেভাবে বাংলায় তাদের প্রভাব বিস্তার করে ফেলেছে তাতে তৃনমূলের অসুবিধা হচ্ছে এবং ২০১৯ নির্বাচন নিয়ে ভয় পাচ্ছেন তৃনমূল। অপর দিকে বিজেপি এখন বাংলায় প্রধান বিরোধী দল তাই তাদের এই উত্থান কে আটকাতে কংগ্রেস ও সিপিএম মোদী-অমিত শাহকে বাঙালি বিরোধী হিসাবে প্রচার করছেন।

কিন্তু ঘরোয়া আলোচনায় বিজেপির তরফ থেকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে যে এই ব্যাপারে বিরোধীরা যতই পরিকল্পনা করুক তাদের কোনো পরিকল্পনা আর সফল হবে না। এই পরিস্থিতিতে পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জেলা যেগুলি বাংলাদেশ লাগোয়া সেই সব জেলার মানুষ অনুপ্রবেশের কারনে এখন তৃণমূল সরকারের উপর চটে রয়েছেন। বিজেপি নেতাদের কথায়, এখন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঠ্যালায় পরেছেন তাই বাঙালি বাঙালি করছেন। কারন অসমে যাদের নাম উঠে এসেছে অনুপ্রবেশকারী হিসাবে তারা বেশির ভাগই বাংলাদেশি মুসলিম। কিন্তু উনি সরাসরি সেই কথা বলতে ভয় পাচ্ছেন। সরাসরি মুসলিমদের সাপোর্ট করতে ভয় পাচ্ছেন। কারন উনি জানেন যে উনি যদি এই সময় মুসলিমদের সাপোর্ট করে কিছু বলেন তাহলে বাংলায় সংখ্যাগরিষ্ঠ হিন্দুদের ভোটের একটা বড়ো অংশ তার দলের বিরুদ্ধে চলে যাবে।

পর্যবেক্ষকদের মতে, আসামের জনগনের একটা বড়ো অংশ বহু দিন ধরেই এই অনুপ্রবেশের বিরুদ্ধে ছিল তাই বিজেপি জাতীয় পঞ্জিকরণের মাধ্যমে তাদের নাম প্রকাশ করে একটা বড়ো অংশের সমর্থন নিজেদের দিকে টেনে নিলো। সঙে বাংলার বিজেপির তরফ থেকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে যে অসমের অনুপ্রবেশকরিদের যদি বাংলায় আশ্রয় দেওয়া হয় তাহলে তারা এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ গড়ে তুলবে। সব মিলিয়ে ধরে নেওয়া যায় যে এই বিষয় নিয়ে উত্তপ্ত থাকবে অসম ও বাংলার রাজ্যের রাজনীতি ২০১৯ অব্দি। অপর দিকে এই উত্তাপ জিইয়ে রাখতে চাইবে বিজেপি।
#অগ্নিপুত্র

The post ‘বাংলায় বিজেপি এলে NRC করে গলা ধাক্কা দিয়ে বাংলাদেশে পাঠানো হবে অনুপ্রবেশকারীদের।’ appeared first on India Rag.



from India Rag https://ift.tt/2Kdf1cM
24 ghanta

Comments

Popular posts from this blog

পশ্চিমবঙ্গে ন্যাশানাল সিটিজেন রেজিস্টার (NRC) নিয়ে রাজনৈতিক চাপানউতোর লেগেই আছে। আর এরই মধ্যে ভারতীয় জনতা পার্টি (BJP) এর মহাসচিব কৈলাস বিজয়বর্গীয় (Kailash Vijayvargiya) পশ্চিমবঙ্গে বিজেপির সরকার গঠন হওয়ার পর অবৈধ অনুপ্রবেশকারীদের বের করার কথা বলেন। কৈলাস বিজয়বর্গীয় বলেন, আমরা খুব শীঘ্রই সংসদে নাগরিক সংশোধন বিল পেশ করতে চলেছি, আর ওই বিল পাশ করানোর পর NRC নিয়ে তদন্ত শুরু হবে। এর সাথে সাথে উনি বলেন, পশ্চিমবঙ্গে পাকিস্তান আর বাংলাদেশ থেকে আসা হিন্দুরাও যায়গা পাবে। কিন্তু বাকি অনুপ্রবেশকারীদের ঘার ধাক্কা দিয়ে বের করে দেওয়া হবে। রাজ্য বিজেপির পর্যবেক্ষক বিজয়বর্গীয় বলেন, আমাদের সরকার পশ্চিমবঙ্গে NRC কাগু করবে। আর এরপর একটিও হিন্দুকে বাংলা ছেড়ে অন্যত্র যেতে হবেনা। বজয়বর্গীয় তৃণমূল কংগ্রেস এর নাম না নিয়ে আক্রমণ করে বলেন, কিছু দল আর তাঁদের নেতা/নেত্রীরা NRC নিয়ে গুজব ছড়ানোর চেষ্টা চালাচ্ছে। বিজয়বর্গীয় বলেন, তৃণমূলের নেতারা NRC এর নামে মানুষের মধ্যে ভয়ের পরিস্থিতি সৃষ্টি করছে। উনি বলেন, ‘বিজেপির রাষ্ট্রীয় মহাসচিব হিসেবে আমি সবাইকে আশ্বস্ত করতে চাই যে, NRC লাগু হবেই, কিন্তু একটাও হিন্দুকে দেশ ছেড়ে যেতে হবেনা। প্রত্যকে হিন্দুকে ভারতের নাগরিকতা দেওয়া হবে।” আপনাদের জানিয়ে রাখি, পশ্চিমবঙ্গে NRC নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। তৃণমূল আর বিজেপি লাগাতার একে অপরের উপর NRC নিয়ে আক্রমণ করেই চলেছে। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জী সোমবার NRC কে একটি ভুয়ো অভিযান আখ্যা দিয়ে এটির বিরোধিতা করেন। এবং উনি বিজেপির উপর অভিযোগ তুলে বলেন, বিজেপি NRC নিয়ে রাজ্যে ভয়ের পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে, আর এর জন্য এখনো পর্যন্ত রাজ্যের ছয় জন মারা গেছে। আরেকদিকে বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি তথা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অমিত শাহ রাজ্যে NRC লাগু করা নিয়ে একটি অনুষ্ঠান করতে আগামী ১লা অক্টোবর কলকাতায় পা রাখছেন। আনন্দবাজার

links 18

Pages 1